মোদিকে হারাতে পারবেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী!
- ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৩৬, আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৪৫
আমাদের প্রতিবেশী ভারতে সাধারণ নির্বাচন অত্যাসন্ন। দেশটিতে ভোটের দিন-তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তারপরও নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এবং কারা সরকার গঠন করবে তা নিয়ে এরই মধ্যে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা ও বিচার-বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গেছে। আর এর মধ্যেই সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাতনী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করায় ভোটের রাজনীতিতে কংগ্রেস যেন একধাপ এগিয়ে গেছে। কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল প্রিয়াঙ্কা রাজনীতিতে আসুক। তাই আকস্মিকভাবে ক্যারিশমেটিক প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে আসার খবরে শুধু কংগ্রেস নয়, ভারতের রাজনীতিতেই যেন নতুন করে গতি সঞ্চার ও পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে।
আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে প্রিয়াঙ্কার সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান নিঃসন্দেহে একটি চমক। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়েছে। তার ভাইও দলের বর্তমান সভাপতি রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েই প্রিয়াঙ্কাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ অবশ্য দেরিতে রাজনীতিতে প্রবেশ করে প্রিয়াঙ্কা ভারতের মতো দেশের রাজনীতিতে আদৌ প্রভাব ফেলতে পারবেন কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন। বিশেষ করে বিজেপি নেতারা এরই মধ্যে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
এ দিকে পূর্ব-উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন কংগ্রেসের নেতাকর্মীরা। তাকে রাজকীয় কায়দায় স্বাগত জানাতে কংগ্রেসের ১২৫ বছরের পুরনো কার্যালয় নতুন করে সাজানো হচ্ছে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এত দিন পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় ২০ বছর ধরে কেবল রায়বেরিলি ও আমেথি আসনে মা সোনিয়া গান্ধী ও ভাই রাহুল গান্ধীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন, সক্রিয় রাজনীতিতে আসেননি। শুধু কংগ্রেস নয়, ভারতের সাধারণ মানুষের কাছে তার আকর্ষণ অপ্রতিরোধ্য। সাধারণ মানুষ তাকে দ্বিতীয় ইন্দিরা গান্ধী হিসেবে দেখেন। তার মধ্যেই জওয়াহেরলাল গান্ধী ও ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া খুঁজে পান।
পাক-ভারত উপমহাদেশে বংশীয় ধারার রাজনীতি এখনো অত্যন্ত প্রভাব রাখে। পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টো-বেনজির ভুট্টো, ভারতের জওয়াহেরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী পরিবার এবং বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার পরিবার ও বংশীয় ধারায় প্রভাব অনস্বীকার্য। তাই ইন্দিরা গান্ধীর উত্তরসূরি প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ কংগ্রেস ও ভারতের রাজনীতিতে যে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিদেশ থেকে ফিরে ফেব্রুয়ারির শুরুতেই দলের দায়িত্ব নেবেন প্রিয়াঙ্কা। ধর্মীয় রীতিতে কুম্ভমেলায় স্নান করার পর প্রিয়াঙ্কা ও তার বড় ভাই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষেèৗতে একসাথে সংবাদ সম্মেলন করবেন। প্রিয়াঙ্কাকে উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের পূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
রাজ্যের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে প্রিয়াঙ্কার দায়িত্বে পড়েছে পূর্বাঞ্চলের ৪২টি কেন্দ্র। ওই অঞ্চলেই পড়েছে রাহুলের আমেথি, সোনিয়া গান্ধীর রায়বেরিলি আসন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বারানসি এবং উত্তর প্রদেশ বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গোরক্ষপুর। রাজ্যের অবশিষ্ট অঞ্চলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মধ্য প্রদেশের যুবনেতা ও এমপি জ্যোতিবাদিত্য সিন্ধিয়াকে। রাহুল গান্ধী আমেথিতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কংগ্রেস আক্রমণাত্মক রাজনীতি করবে। তাই প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও যুবনেতা সিন্ধিয়াকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। উড়িষ্যায় রাহুল বলেছেন, তাদের তড়িঘড়ি করে এই দায়িত্ব দেয়া হয়নি। লম্বা সময়ের জন্য মিশন নিয়ে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আর প্রিয়াঙ্কার ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই বিষয়টি পরিবারে আলোচিত হচ্ছিল। কিন্তু ছেলেমেয়ের কারণে পুরোদমে সোনিয়ার রাজনীতিতে আসা সম্ভব হচ্ছিল না। এখন তারা বড় হয়েছে। তাই পরিবারের বাধা আর নেই। প্রিয়াঙ্কাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসা নিয়ে কংগ্রেসের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। তিনি বলেন, রাজনীতিতে নতুন আগন্তুকের জন্য সমাজবাদী পার্টি খুবই খুশি। কংগ্রেস ও দলের প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীকে চমৎকার এই সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আগেই উল্লেখ করেছি, প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে আসার ঘোষণায় বিভিন্ন মহলে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা। এতে কংগ্রেস উজ্জীবিত হলেও রাজ্যের শাসক দল বিজেপি চিন্তিত। উচ্চবর্ণের ভোট কিছুটা কংগ্রেসের দিকে ফিরে এলে তাতে বিজেপির ক্ষতি। তাই বিজেপি নেতারা প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে বেসামাল মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, লোকসভা ভোটে নিজেদের আসন পাকা করতে কংগ্রেস এখন ‘চকোলেট ফেসের’ সন্ধানে নেমেছে। তাই প্রিয়াঙ্কাকে সাধারণ সম্পাদকের পদে বসিয়েছেন রাহুল। তিনি আরো বলেন, কংগ্রেসে রাহুলের নেতৃত্বের ওপর ভরসা নেই- তাই তাকে ব্যাকফুটে ফেলে প্রিয়াঙ্কাকে সক্রিয় রাজনীতিতে নিয়ে আসা হয়েছে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কংগ্রেসের পুরনো সুদিন আদৌ ফেরাতে পারবেন কি না প্রশ্ন করা হলে সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোমা চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, ‘দেখুন, রাজনৈতিক উপস্থিতি, ব্যক্তিত্ব বা প্রতিপক্ষের টক্কর নেয়ার ক্ষমতা ধরলে প্রিয়াঙ্কা অবশ্যই কংগ্রেসের জন্য সম্পদ।’
প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে আসা খুব দেরি হয়েছে কি না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে ভীষণ দেরি বলে কিছু হয় না, কারণ রাতারাতি কারো কপাল ফিরে যেতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রিয়াঙ্কার বয়স ৪৭ বলে দেরি হয়ে যায়নি। প্রিয়াঙ্কা এখনো ফুরিয়ে যাননি মোটেই।’
ভারতের রাজনীতিতে গত পাঁচ বছরের নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির সাফল্য যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতার পাল্লাও তাদের ঝুলিতে কম নেই। বিশেষ করে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ভারতে বিজেপি যে উগ্র সাম্প্রদায়িক ধারা চালু করেছে এবং সংখ্যালঘুদের ওপর যেভাবে নিপীড়ন করেছেÑ তাতে দেশটির সংবিধান বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে এবং কথিত ‘বৃহত্তম গণতন্ত্রের’ আলখেল্লা খসে পড়েছে। তাই কংগ্রেস প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে রাজনীতিতে এনে যে চমক সৃষ্টি করেছে, তাতে বিজেপি শিবিরে যে হৃদকম্প শুরু হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে; তা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই এখন দেখার বিষয়।